
জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমলে বরকত: স্বর্ণালী সুযোগ মুসলিম উম্মাহর জন্য
ইসলামী ক্যালেন্ডারের অন্যতম পবিত্র মাস জিলহজ শুরু হতে চলেছে। এই মাসের প্রথম দশ দিনকে ইসলাম ধর্মে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই দিনগুলোর আমলকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“জিলহজের প্রথম দশ দিনের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় কোনো আমলের দিন নেই।”
— (বুখারী, হাদীস: ৯৬৯)
হজরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন:
“যে কোনো দিনেই আমল করা উত্তম, কিন্তু জিলহজের এই দশ দিনে করা আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।”
এ কথায় সাহাবিরা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি এই আমলের চেয়ে কম মূল্যবান?”
তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, এমনকি জিহাদও না। তবে সে ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যে নিজের জান-মাল নিয়ে জিহাদে গিয়ে আর কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।”
— (সহীহ বুখারি, তিরমিজি)
জিলহজ মাসের প্রথম থেকে নবম তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখার চেষ্টা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কারও পক্ষে পুরো নয় দিন রোজা রাখা সম্ভব না হলে, যতদিন সম্ভব, ততদিন রোজা রাখাই উত্তম। তবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ৯ জিলহজ— আরাফার দিন— এই দিনে রোজা রাখার ওপর। কেননা, এটি এমন একটি দিন, যার রোজা অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ এবং বিপুল সওয়াবের অধিকারী।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“আমি আশা করি, আরাফার দিনের রোজার বরকতে আল্লাহ এক বছর আগের ও এক বছর পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)
এই ১০ দিনে যেসব আমল করতে পারেন:
- নফল রোজা রাখা – আরাফার দিনে (৯ জিলহজ) রোজা রাখা অতীত ও ভবিষ্যতের এক বছরের গুনাহ মাফের উসিলা হতে পারে।
- তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল, ও তাসবিহ পাঠ – “আল্লাহু আকবার, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ” বেশি বেশি বলা।
- নামাজ কায়েম – পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।
- কুরআন তিলাওয়াত – কুরআনের আয়াতসমূহ পাঠ এবং তার অর্থ বোঝা ও পালন করা।
- সদকা ও দান – দান-খয়রাত এবং গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
- তাওবা ও ইস্তেগফার – পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া।
- কুরবানি – ১০ জিলহজে ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি করা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম মুসলিম উম্মাহকে এই ১০ দিনে আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এই দিনগুলো হচ্ছে ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সময়। এই সুযোগ কাজে লাগালে একজন মুমিনের জীবন বদলে যেতে পারে।”
জিলহজের এই পবিত্র দিনগুলো মুসলিমদের জন্য আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের সুবর্ণ সুযোগ। তাই এসব দিনকে গুরুত্বসহকারে পালন করা উচিত।