নীল জল আর প্রবালে মোড়ানো স্বপ্নদ্বীপ সেন্ট মার্টিন

নীল জল আর প্রবালে মোড়ানো স্বপ্নদ্বীপ সেন্ট মার্টিন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, যেন এক নিঃসৃত স্বপ্ন। বঙ্গোপসাগরের বুকে নীল জলরাশি, ঝকঝকে আকাশ, আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো দ্বীপটি প্রতিদিনই আকর্ষণ করছে হাজারো পর্যটককে।

এই দ্বীপটি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত নারিকেল জিঞ্জিরা নামে, কারণ এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে।প্রবাল রিফ, নারকেল গাছের সারি, আর নির্জন সৈকত — সবকিছু মিলিয়ে সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের কাছে এক অনন্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো পর্যটক নিয়ে দ্বীপে পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে সবাই মুগ্ধ হন প্রকৃতির অপরূপ সাজে।

সেন্ট মার্টিন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রবাল প্রাচীর, স্বচ্ছ নীল জল এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দ্বীপটিতে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ১২০ প্রজাতির পাখি এবং ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। ভাটার সময় হেঁটে যাওয়া যায় এমন একটি ছোট দ্বীপ “ছেঁড়া দ্বীপ” পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক রুবাইয়াত হোসেন বলেন, “এখানে এসে মনে হয়, যেন বাংলাদেশেই স্বর্গের টুকরো। এত স্বচ্ছ পানি আর শান্ত পরিবেশ দেশের আর কোথাও নেই।”

বিগত কয়েক দশকে পর্যটনের ব্যাপক প্রসারের ফলে দ্বীপটিতে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং নানা ব্যবসা। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটনের চাপে প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি সরকার সেন্ট মার্টিন ঘেঁষা ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।

তবে এই পর্যটন প্রবাহের মাঝে পরিবেশবিদরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটনের চাপে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রবাল জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। পর্যটকদের দায়িত্বশীল আচরণ, প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকার ইতোমধ্যে কিছু পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, নৌযান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রবাল এলাকা সুরক্ষা।

সেন্ট মার্টিন শুধু একটি ভ্রমণ গন্তব্য নয়, এটি একটি জীবন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে চাই সবার সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

CATEGORIES
TAGS
Share This