
বিপুল দেনার চাপে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা
দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বিপুল পরিমাণ দেনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) একত্রে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন কোম্পানি শেভরন পেট্রোবাংলাকে এবং ভারতীয় কোম্পানি আদানি পিডিবিকে বকেয়া পরিশোধের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে গরমের সময় বিদ্যুতের স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
গত তিন বছর ধরে আর্থিক সংকট এবং ডলার সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা চলছে। এর কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কার্যকরী রাখতে না পারায় বিশেষত গরমের সময়ে তীব্র লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দাবি, পিডিবির কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার পাওনা রয়েছে। আর এ আর্থিক সংকটের কারণে এবারও গরমে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এছাড়া, ভারতীয় কোম্পানি আদানি পিডিবিকে ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) বকেয়া দাবি করে জুনের মধ্যে তা পরিশোধ করতে চিঠি দিয়েছে। না হলে জরিমানা দিতে হবে। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ির মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও একই অঙ্কের টাকা দাবি করছে।
পেট্রোবাংলার গ্যাসের মূল্য বাবদ পাওনা ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে, পিডিবি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তত ৪৩ হাজার কোটি টাকার দেনায় জর্জরিত।
এদিকে, জ্বালানি খাতেও একই ধরনের আর্থিক চাপ রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক দাবি করা ভ্যাট-শুল্ক, শেভরনের পাওনা এবং এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার ওপর ২২ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে শেভরন পেট্রোবাংলাকে কিছু টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান জানান, বিপুল দেনা এবং আর্থিক সংকটের কারণে গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে। এই সংকট মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহে এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ, তবে এটি মোট দেনার তুলনায় একেবারেই নগণ্য।
বিগত কয়েক বছরে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ডলার সংকট, অর্থনৈতিক টানাপড়েন এবং বিপুল বকেয়ার কারণে চরম সংকটে পড়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ সব সমস্যাগুলো কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, তার ওপর নির্ভর করছে এবারের গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি।