
‘মার্চ ফর জাস্টিস’: কারফিউ ভেঙে পথে নামে মানুষ, মুখোমুখি আইন ও জনগণ
৩১ জুলাই ২০২৪—দিনটিতে আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। রক্তক্ষয়ী ঘটনার জবাবদিহিতা চেয়ে সেই দিন শুরু হয় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ বা ‘ন্যায়বিচারের অভিযাত্রা’। কারফিউ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনে নামেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আইনজীবীরাও।
দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর দোয়েল চত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীরা। বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও এবার সরাসরি যুক্ত হয় মিছিলে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে যায় হাইকোর্ট অভিমুখে। পথেই আটক হন কয়েকজন আন্দোলনকারী।
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এদিন শুরু হয় আইনজীবীদের সমান্তরাল ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ছাত্র-আইনজীবীদের ঐক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে আইনজীবীরা নিজেদের গ্রেফতারের প্রস্তাব দিয়ে বলেন—“তাদের ছেড়ে দিন, আমাদের নিন।”
সেদিন দেশের রাজপথে তৈরি হয় এক বিরল দৃশ্য। শুধু ঢাকা নয়—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ সারা দেশেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা একসাথে রাস্তায় নামেন। চট্টগ্রামে আইনজীবীদের সহায়তায় আদালত প্রাঙ্গণেই চলে প্রতিবাদ। রাজপথে আর ছিল না কারও ভয় বা মাথানত করা।
সেইদিন একটি রিটের শুনানির কথা ছিল, যেখানে দাবি ছিল—শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো যাবে না। কিন্তু হাইকোর্ট জানায়, বেঞ্চের একজন বিচারপতি অসুস্থ, তাই শুনানি স্থগিত।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের একত্র করতে চাইলে উল্টো তাকে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। তার দলীয় সাবেকরাই এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেন। একপর্যায়ে স্লোগান ও প্রতিবাদের মুখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
সেদিনই গোয়েন্দা বিভাগের ডিবি হারুণকে বদলি করে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে। এরপর থেকে ঢাকার সব থানার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে তার অধীনে।
আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা জানান, তখন থেকেই ছাত্রলীগের ভেতরে তৈরি হতে থাকে ‘বিদ্রোহী ছাত্রলীগ’। তারা জানান, অনেক ছাত্রলীগ সদস্য দলীয় নীতির প্রতি অনুগত না থেকে আন্দোলনের পক্ষে কাজ করছিলেন। অনেকেই পদত্যাগও করেন।সাবেক আন্দোলন সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, “সবাই মন থেকে ছাত্রলীগ করেনি। যারা বিবেকবোধে আন্দোলনের পক্ষে ছিল, তাদের আমরা আমাদের সঙ্গে এনেছি।”
জুলাইয়ের শেষ দিন স্পষ্ট হয়ে যায়—এই আন্দোলন আর শুধু শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারাদেশে মানুষের একটি অভিন্ন দাবি—হত্যার বিচার চাই। আন্দোলন রূপ নেয় জনতার ন্যায়বিচারের দাবিতে।