
ক্যানসার কারও একার রোগ নয়—পরিবারেও লুকিয়ে থাকতে পারে ঝুঁকি
পরিবারের কারও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অনেককেই ভাবিয়ে তোলে—”আমারও কি ক্যানসার হতে পারে?” প্রশ্নটি একেবারে যুক্তিসংগত। কারণ, অনেক রোগের মতো কিছু কিছু ক্যানসারও পারিবারিক বা বংশগতভাবে ঘটতে পারে।
সব ক্যানসার কি বংশগত?
না, মোটেও না। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্যানসার প্রকৃত অর্থে জেনেটিক বা বংশগত হয়ে থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার যেমন—স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসার—একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মধ্যে দেখা যেতে পারে। এর পেছনে থাকতে পারে বিশেষ কিছু জিনগত পরিবর্তন।

বংশ বলতে কাদের বোঝানো হয়?
ক্যানসারের ঝুঁকি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা আত্মীয়দের তিনটি স্তরে ভাগ করেন:
- প্রথম স্তর: মা–বাবা, আপন ভাই–বোন ও সন্তান। এদের সঙ্গে জেনেটিক মিল সবচেয়ে বেশি, তাই এদের ক্যানসারের ইতিহাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- দ্বিতীয় স্তর: দাদা–দাদি, নানা–নানি, চাচা–মামা, ফুফু–খালা। পরিবারের একাধিক সদস্য কম বয়সে একই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এদের তথ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
- তৃতীয় স্তর: চাচাতো/মামাতো ভাই–বোন, দাদা বা নানার ভাই–বোন। জেনেটিক পরিবর্তনের সন্দেহ হলে তাদের তথ্যও প্রয়োজন হতে পারে।
বংশে ক্যানসার থাকলে কী করবেন?
- পারিবারিক ইতিহাস সংরক্ষণ করুন: কার কখন, কী ধরনের ক্যানসার হয়েছিল, আক্রান্ত বয়স ইত্যাদি লিখে রাখুন।
- বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: মেডিকেল অনকোলজিস্ট বা জেনেটিক কাউন্সেলরের পরামর্শ নিয়ে ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- জেনেটিক পরীক্ষা করুন (প্রয়োজনে): চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট জিন পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকি নির্ধারণ করা সম্ভব।
- নিয়মিত স্ক্রিনিং করান: যেমন স্তন ক্যানসারের জন্য মেমোগ্রাম, কোলন ক্যানসারের জন্য কোলোনোস্কোপি, জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য প্যাপ স্মিয়ার ইত্যাদি।
- সুস্থ জীবনযাপন করুন: ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অতিরিক্ত ওজন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।
ভয়ের কিছু নেই, সচেতন থাকাই মূল চাবিকাঠি
পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং সতর্কতা ও সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়াই হতে পারে সুরক্ষার প্রথম ধাপ। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে অনেক ক্যানসারই এখন নিরাময়যোগ্য—যদি তা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে।