
বাইক চালান নিয়মিত? এই সাধারণ ভুলগুলোই করছে বড় ক্ষতি
বাইক শুধু একটি বাহন নয়—কর্মজীবনের সহচর, শখের সঙ্গী, আবার কারো কাছে এটি একটি স্টাইল স্টেটমেন্ট। তবে যত্নের অভাবে আপনার সাধের বাইকটিই অল্প সময়েই হয়ে উঠতে পারে সমস্যার উৎস।
অনেক সময় নিজের অজান্তেই আমরা এমন কিছু ভুল করে ফেলি, যা বাইকের কর্মক্ষমতা ও স্থায়িত্বে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এসব ভুল এড়িয়ে চলতে পারলে বাইকের পারফরম্যান্স যেমন ভালো থাকবে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদেও নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠবে।

চলুন, দেখে নেওয়া যাক—বাইকের যত্নে সবচেয়ে বেশি হওয়া কিছু সাধারণ ভুল:
১. ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনে অবহেলা
অনেকেই মাসের পর মাস ইঞ্জিন অয়েল না বদলে বাইক চালিয়ে যান। এতে ইঞ্জিনে ঘর্ষণ বেড়ে যায়, তাপমাত্রা বাড়ে, আর ইঞ্জিনের আয়ু হ্রাস পায়। প্রতি ১,০০০–২,০০০ কিলোমিটার পর (বা বাইক নির্মাতার নির্দেশনা অনুযায়ী) ইঞ্জিন অয়েল বদলানো উচিত।
২. চেইন পরিষ্কার ও সঠিক টান না রাখা
ময়লা চেইন মাইলেজ ও পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। আবার অতিরিক্ত টাইট চেইন গিয়ারবক্সে চাপ সৃষ্টি করে। প্রতি ৫০০–৭০০ কিমি পর চেইন পরিষ্কার করে লুব্রিকেট করুন এবং টান যেন মাঝারি থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
৩. ব্রেক প্যাড বা ব্রেক শু পরিবর্তনে দেরি
ব্রেকে শব্দ বা প্রতিরোধ অনুভব করলেও অনেকে সেটাকে উপেক্ষা করেন। এটা হতে পারে দুর্ঘটনার কারণ। প্রতি ৫,০০০–১০,০০০ কিমি পর ব্রেক প্যাড চেক করুন এবং সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বদলান।
৪. টায়ারের সঠিক চাপ না রাখা
অতিরিক্ত বা কম টায়ার প্রেসার রাইডিং কমফোর্ট কমায়, টায়ার দ্রুত ক্ষয় করে এবং মাইলেজ কমিয়ে দেয়। প্রতি সপ্তাহে একবার টায়ার প্রেসার চেক করুন এবং কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিক রাখুন।
৫. বৃষ্টিতে ভেজা বাইক শুকিয়ে না রাখা
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বাইক পরিষ্কার বা শুকিয়ে না রাখলে ধীরে ধীরে মরিচা ধরে যায়, যা বাইকের বিভিন্ন পার্টস ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বৃষ্টির পর বাইক মুছে শুকিয়ে নিন এবং চেইনে লুব্রিকেন্ট দিন।
৬. নিম্নমানের বা লোকাল পার্টস ব্যবহার
কম খরচে বিকল্প পার্টস ব্যবহার করলে সাময়িক লাভ হলেও, দীর্ঘমেয়াদে ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষতি হতে পারে। যতটা সম্ভব অরিজিনাল বা ব্র্যান্ডেড স্পেয়ার পার্টস ব্যবহার করুন।
৭. দীর্ঘদিন চালু না রেখে বাইক ফেলে রাখা
বাইক দীর্ঘদিন না চালালে ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে যেতে পারে, ফুয়েল অক্সিডাইজড হয় এবং পার্টস আটকে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ব্যাটারি খুলে রাখা, ট্যাঙ্ক ফাঁকা করা বা ফুয়েল স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
৮. নিয়মিত সার্ভিসিং না করা
অনেকেই বাইকে সমস্যা না হলে গ্যারেজে যান না। অথচ নিয়মিত সার্ভিসিং বাইকের আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আগেভাগেই ধরতে সাহায্য করে। অন্তত ২-৩ মাস পর পর সার্ভিসিং করানো উচিত, বিশেষ করে আপনি যদি নিয়মিত বাইক চালান।
আপনার বাইকও যত্ন চায়। ছোট ছোট ভুল এড়িয়ে চললে এটি শুধু আরও ভালো পারফরম্যান্সই দেবে না, বরং দীর্ঘদিন আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থাকবে। সময়মতো নজর দিন, সচেতন হোন — বাইকও আপনার প্রতি ঠিক ততটাই যত্নশীল থাকবে।