
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফটো জার্নালিস্ট ফাতিমাসহ পরিবারের ১০ সদস্য নিহত
গাজায় বসবাসরত তরুণ ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা জানতেন, মৃত্যু তার খুব কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। কারণ, গত ১৮ মাস ধরে তিনি গাজার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ছবি ধারণ করছিলেন। জানতেন, প্রাণ যেকোনো সময় ঝরে যেতে পারে—তবুও তার একটাই অনুরোধ ছিল: নিঃশব্দে চলে যেতে চান না তিনি।
তাই একদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “আমার যদি মৃত্যু হয়, চাই সেটা হোক উচ্চকণ্ঠে। আমি শুধু আরেকটা পরিসংখ্যান কিংবা হেডলাইন হয়ে হারিয়ে যেতে চাই না। চাই এমন এক মৃত্যু, যা বিশ্বকে নাড়া দেবে; এমন প্রভাব, যা কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে না; এমন একটি ছবি, যা জায়গা ও সময়ের সীমা অতিক্রম করে থাকবে।”
দুঃখজনকভাবে, তার কথাগুলো ভবিষ্যদ্বাণীর মতোই সত্যি হয়ে গেল। হয়তো উপরে কেউ তার মনের কথাগুলো শুনেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল বীভৎস এবং মর্মান্তিক। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফাতিমা হাসুনা এবং তার পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ১৬ এপ্রিল, বিয়ের মাত্র কয়েক দিন আগে, মাত্র ২৫ বছর বয়সী ফাতিমা গাজার উত্তরের নিজ বাড়িতে বিমান হামলার শিকার হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তার গর্ভবতী বোনও।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের এক সদস্য, যিনি তাদের মতে, বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যদের ওপর আক্রমণে জড়িত ছিলেন।
ফাতিমার মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ঘোষণা আসে, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার জীবনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে।
ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি নির্মিত ডকুমেন্টারিটি—‘পুট ইয়োর সোল অন ইয়োর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’—ফাতিমা ও ফারসির মধ্যকার ভিডিও কথোপকথনের মধ্য দিয়ে গাজার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংগ্রাম এবং বেদনার গল্প তুলে ধরেছে। ফারসি বলেছিলেন, “ফাতিমা ছিল গাজায় আমার চোখ, যিনি প্রাণচঞ্চল, হাসিখুশি, কিন্তু একইসাথে বেদনার ভারে নুয়ে পড়া এক সংগ্রামী আত্মা। তার হাসি, কান্না, আশা, হতাশা—সব আমি ক্যামেরাবন্দি করেছি।”
ফাতিমার মৃত্যুর পর ফারসি বলেন, “আমি হারালাম গাজার প্রতি আমার দৃষ্টির একমাত্র জানালাকে। সে ছিল এক দীপ্তিমান আলোকচ্ছটা, যে গাজার যন্ত্রণা ও সাহসিকতার কাহিনি বিশ্বকে জানিয়ে গিয়েছে।”
উল্লেখযোগ্য যে, চলমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ইতিমধ্যে ১০০-রও বেশি সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন।