
সাদা পাথর এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান: উদ্ধার ১২ হাজার ঘনফুট পাথর
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বুধবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর শুরু হওয়া এই অভিযানে রাস্তায় আটকানো হয়েছে পাথরবোঝাই একাধিক ট্রাক এবং নদী থেকে চুরি হওয়া পাথরবোঝাই বোট জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে, যা পুনরায় ধলাই নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, “আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় রেখে এই অভিযান পরিচালনা করছি। যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুটপাট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “চার বছর পরিবেশকর্মী হিসেবে সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছি, এখন উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না।”
এরপরই সিলেট প্রশাসন তদন্তে নামে এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। একইসাথে দুদক সিলেট কার্যালয় থেকে উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শনে যায়।
পাথর লুটপাট ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে আয়োজিত সমন্বয় সভায় নেওয়া হয় ৫ দফা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এগুলো হলো:
- জাফলং ইসিএ ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনীর দায়িত্ব পালন।
- গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পুলিশ চেকপোস্ট।
- অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা।
- পাথর চুরিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা।
- চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া।
দুদক সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই অবৈধ লুটপাট ঘটেছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
সাদা পাথরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ও পর্যটন এলাকা রক্ষায় প্রশাসনের এই অভিযান যথার্থ ও সময়োপযোগী হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন — “শুধুমাত্র উদ্ধার অভিযানে থেমে গেলে হবে না, প্রয়োজন স্থায়ী নজরদারি এবং স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে উদাহরণমূলক শাস্তি।”